ভূমিকা – উনিশ শতকে শেষার্ধে ও বিশ শতকে প্রথমার্ধে বহির্ভারতে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহনের ঘটনা ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে নারী শক্তির গুরুত্বকে বৃদ্ধি করে। রাজনীতিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের তত্বও ক্রমশই জনপ্রিয়।
প্রেক্ষাপট: বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পর থেকে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহনের প্রেক্ষাপট রচিত হয়। স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম নেতা কৃষ্ণকুমার মিত্রের কন্যা কুমুদিনী মিত্র তাঁর ‘সুপ্রভাত’ পত্রিকায় মাধ্যমে দেশপ্রেমের আদর্শ প্রচার করে এবং এই পত্রিকা শহরের মধ্যবিত্ত নারীদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ ছাড়া মীরা দাসগুপ্তার সম্পাদিত ‘বেণু’ পত্রিকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা:
(১) বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্ব- এই আন্দোলনের সমগ্র বাংলার কয়েকজন নারী বিপ্লবীদের আশ্রয়দান, গোপনে সংবাদ প্রেরণ ও অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্ব পালন করেন। এ প্রসঙ্গে ননীবালা দেবীর কথা বলা যায়। এ ছাড়া সরলাদেবী চৌধুরানী প্রতিষ্ঠিত ‘লক্ষীর ভান্ডার’ ও ‘বীরাঙ্গনা ব্রত’ স্বদেশী চেতনার বিকাশে সাহায্য করেছিল।
(২) দীপালি সংঘ: বিপ্লবী লীলা রায় কর্তৃক ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত দীপালি সংঘের (১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে) উদ্যোগে নারীদের লাঠিখেলা, শরীরচর্চা, অস্ত্র চালানো, অস্ত্রশস্ত্র জোগার ও বৈপ্লবিক আন্দোলনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এই সংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন ছাত্রী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।
(৩) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার: বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (১৯৯১১-৩২ খ্রি:) চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নায়ক মাস্টারদা সূর্যসেনের সহযোগী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে একদল বিপ্লবী চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমন করে ক্লাব বিপর্যস্ত করে দেয় এবং পটাশিয়াম সায়ানাইড বিষপান করে আত্মহত্যা করেন।
(৪) কল্পনা দত্ত: চট্টগ্রামের বিখ্যাত বিপ্লবী নারী কল্পনা দত্ত বিপ্লবী দলের গোপন কাগজপত্র ও অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তা ছাড়া তিনি বন্দী বিপ্লবী নেতাদের মুক্ত করার জন্য ‘ডিনামাইট ষড়যন্ত্র’ করেছিলেন। তিনি জেলবন্দী হন ও ১৯৩৯ সালে জেল থেকে ছাড়া পান ।
(৫) শান্তি ও সুনীতি: কুমিল্লার দুইজন ছাত্রী শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সি.জি.ভি. স্টিভেনকে গুলি করে হত্যা করেন। আবার উজ্জ্বলা মজুমদার দার্জিলিং-এ গভর্নরকে হত্যা করার চেষ্টা করলে ধরা পড়েন ও জেলবন্দী হন।
(৬) বীণা দাস: আধা বৈপ্লবিক সংগঠন ‘ছাত্রী সংঘ’-এর সদস্য তথা কলেজ ছাত্রী বীণা দাস কলকাতা বিশবিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সময় সেনেট হলে গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যার জন্য গুলি করেন (৬ ফ্রেব্রুয়ারী ১৯৩২) জ্যাকসন অল্পের জন্য বেঁচে যান এবং জ্যাকসনকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে বীণা দাসের নয় বছর কারাদন্ড হয়।
(৭) লক্ষী সায়গল: আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনী ‘ঝাঁসী ব্রিগেডের’ দায়িত্বপ্রাপ্ত লক্ষী স্বামীনাথন বা লক্ষী সায়গলের বৈপ্লবিক কাজকর্মও খুব উল্লেখযোগ্য ছিল।