প্রশ্ন: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের ফলাফল
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ সিপাহী বিদ্রোহের প্রভাব পড়েছিল পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এই মহাবিদ্রোহ পরবর্তী সময়ের জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে ও ব্রিটিশ প্রশাসনে তার ছাপ ফেলেছিল।
(1) কোম্পানির শাসনের অবসান: ব্রিটেনের পার্লামেন্ট ভারতের শাসনভার কোম্পানির হাতে রাখতে সাহস পেল না। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘ভারত শাসন আইন’ পাস হলো। এই আইনের মাধ্যমে কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে মহারানী ভিক্টোরিয়ার হাতে ভারতের শাসনভার তুলে দেওয়া হল। স্থির হলো মহারানী প্রতিনিধিরূপে একজন গভর্নর জেনারেল ভারত শাসন করবেন।
(2) শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন: কাউন্সিল আইন পাস করে পূর্বের কেন্দ্রীকরণ নীতির প্রস্তাব বাতিল করা হয়। ভারতের ব্রিটিশ প্রশাসনকে আরও বিকেন্দ্রীকরণের চেষ্টা শুরু হয়। মুম্বাই ও মাদ্রাজ কাউন্সিলকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়। স্থির হয় ভারত শাসন পরিচালনা সাহায্য করবে ১৫ জন সদস্য বিশিষ্ট ইন্ডিয়া কাউন্সিল।
(3) সামরিক সংস্কার: সামরিক বিভাগকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ভারতের ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে বিদেশি সেনা সংখ্যা বাড়ানো হয়। গোলন্দাজ বাহিনীকে ভারতীয় সেনাদের নিয়োগ বন্ধ করা হয়। প্রেসিডেন্সি সেনাবাহিনীকে আলাদা করে দেওয়া হয়। ভারতীয় সেনাদের সেনাবাহিনীর উচ্চ পদে নিয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
(4) দেশীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন: দেশীয় রাজ্যগুলি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হয়েছিল। এখন থেকে দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি নেওয়া হয় যাতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দীর্ঘস্থায়ী হয়।
(5) সামাজিক পরিবর্তন: মহাভারতের সামাজিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটায়। পাশ্চাত্য দর্শন, বিজ্ঞান ও সাহিত্যের স্পর্শে ভারতীয় সমাজ আধুনিক হয়ে উঠতে শুরু করে। হিন্দুরা পাশ্চাত্য প্রভাবে আধুনিক হয়ে উঠলেও মুসলমানরা পাশ্চাত্য প্রভাব থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে।
(6) মহারানী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণা: উন্নততর ভারত শাসন আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মহারানী ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধিরূপে সর্বপ্রথম ভারতে ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং। নবনিযুক্ত ভাইসরয় কানিং এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত এক দরবারে মহারানীর ঘোষণাপত্র পাঠ করেন (১ নভেম্বর, ১৮৫৮ সালে) যা মহারানীর ঘোষণাপত্র নামে পরিচিত।