ভুমিকা: 1857 এর বিদ্রোহের সময়কাল থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ঐতিহাসিকরা এই বিদ্রোহের প্রকৃতি ও চরিত্র বিশ্লেষন করেছেন।
মহাবিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি : 1857 সালের মহাবিদ্রোহ প্রকৃতি বিভিন্ন দিকগুলি হল-
1) শুধুমাত্র সিপাহী বিদ্রোহ :
ম্যলেসন, জন কে, স্যার জন লরেন্স, পি ই রবার্টস প্রমুখ ইংরেজ এই বিদ্রোহকে নিছক সিপাহী বিদ্রোহ ছাড়া আর কিছু মনে করেন না। সম সাময়িক ভারতীয় লেখক স্যার সৈয়দ আহমেদ খান, দুর্গাদাশ বন্ধ্যোপধ্যায় প্রমুখ মনে করেছেন, সিপাহী ও স্বার্থন্বেষী ব্যক্তিদের দ্বারা সঙ্গঠীত এই বিদ্রোহ জনগনের সংযোগ ছিল গৌন। সিপাহীরা নিজেদের সুযোগ সুবিধার জন্য এই বিদ্রোহ করেছিল।
2) জাতীয় বিদ্রোহ:
জে বি নর্টন, জনকে এবং ইংরেজ ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাফ প্রমুখ 1857 বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলেছেন। কারণ উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বিদ্রোহে সামিল হয়েছিল। সিপহিদের দ্বারা মননিত শেষ মোগল সম্রাট দ্বিতীয় বাহদুর শাহ হয়ে ওঠেন ভারতের জাতীয় সম্রাট, জাতীয়তার প্রতীক, হিন্দু-মুসলিম ঐক্যর প্রতীক।
3) ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম:
প্রখ্যাত বিপ্লবী বিনায়ক দামোদর সাভাকর ‘The Indian war of independence’ গ্রন্থে 1857এর বিদ্রোহকে ‘ ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন। কারণ ইংরেজ বিরোধী এত ব্যাপক আন্দোলনে ইতিপূর্ব ভারতে আর ঘটেনি বলে এটি ছিল ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম।
4) সামন্ততান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া:
বামপন্থী চিন্তাবিদ রজনিপাম দত্ত, এম এন রায় প্রমুখ এই বিদ্রোহকে রক্ষনশীল ও সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলির অভুথ্যান বলে উল্লেখ করেছেন। অধ্যাপক সুশোভন সরকারও এই বিদ্রোহকে সমন্ততান্রিক চরিত্র স্বীকার করে নিয়েছেন।
৫) সাম্প্রদায়িক আন্দোলন:
সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে এর সূচনা ঘটেছিল আলফ্রেদ লয়াল প্রমুখ তত্কালীন অনেক ইংরেজ কর্মচারী ১৮৫৭ -র বিদ্রোহকে সাম্প্রদায়িক আন্দোলন বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
সংশোধনবাদী মতামত: ১৮৫৭-এর বিদ্রহ্কী শটবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর “The Sepoy Mutiny and the Revolt of 1857” গ্রন্থে এবং সুরেন্দ্রনাথ সেন তাঁর “Eighteen Fifty Seven” গ্রন্থে বহু তথ্য সংকলিত করে এই বিদ্রোহের ওপর নতুন করে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছেন।
1 ) রমেশচন্দ্র মজুমদারের মত: ড. মজুমদারের মতে, এই বিদ্রোহ ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে পরেনি। সকল শ্রেনীর জনগনও এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেনি। তাই ১৮৫৭-র তথাকথিত প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ না ছিল, না ছিল জাতীয়, না ছিল স্বাধীনতার যুদ্ধ।
2) ড. সেনের মতামত: ড. সুরেন্দ্রনাথ সেন-এর মতে ১৮৫৭-র বিদ্রোহ সিপাহী বিদ্রোহ হিসেবে শুরু হলেও শেষপর্যন্ততা গণবিদ্রোহ পরিনত হয়। দিল্লি, অযোধ্যা বিহার প্রভৃতি অঞ্চলে জনগনের অংশগ্রহণ ছিল সর্বাধিক এবং যেসকল অঞ্চলে জনগনের সমর্থন ছিল সেসব অঞ্চলে বিদ্রোহী নেতাদের লক্ষ্য ছিল প্রতিবিপ্লব ঘটানো।
উপসংহার: কেমব্রিজ ঐতিহাসিক সি এ বেইলির মতে, ১৮৫৭-র ভারতীয় বিদ্রোহ কেবল একটি আন্দোলন নয়, এর মধ্যে কৃষক অভ্যুত্থান বা জাতীয় বিদ্রোহের মত আরো অনেক কিছই ছিল।
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো