তুমিও কি “বাক্য কাকে বলে” এবং এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে এসেছো তাহলে তুমি একেবারে সঠিক জায়গায় এসে উপস্থিত হয়েছো। আমরা যখনি বাংলা ব্যাকরণ পড়তে শুরু করি তার প্রথম অধ্যায় হল বাক্য ও তার প্রকারভেদ।
বাক্য কাকে বলে এবং বাক্য কয়প্রকার ও কি কি
তাই আপনাদের প্রয়োজনমত আজকে আমরা জানবো যে Bakko Kake Bole ও তার প্রকারভেদ এবং একে কয়টি ভাগে বিভক্ত করা হয়।
সুচিপত্র
বাক্য কাকে বলে?
উত্তরঃ কতকগুলি পদ পরপর বসে যখন মনের ভাব বা অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে বাক্য বলে।
বাক্যের উদাহরণ –
- সন্ধ্যা হলে পাখিরা বাসায় ফেরে।
- ছেলেরা মাঠে ফুটবল খেলছে।
- জলে মাছ সাঁতার কাটে।
বাক্যকে কয়ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী?
উত্তরঃ বাক্যকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় সেগুলি হল উদ্দেশ্য ও বিধেয়
উদ্দেশ্য কাকে বলে ?
উত্তরঃ কোনো একটি বাক্য যার সম্বন্ধে কিছু বলা হয় তাকে উদ্দেশ্য বলে।
বিধেয় কাকে বলে?
উত্তরঃ বাক্যে উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা-কিছু বলা হয় তাকে বিধেয় বলে।
যেমন উদহারণ দিয়ে যদি বলা হয় –
১. ” ছাত্ররা স্কুলে যাচ্ছে “ এটি একটি বাক্য যার মধ্যে উদ্দেশ্য হচ্ছে ” ছাত্ররা “ এবং বিধেয় হচ্ছে ” স্কুলে যাচ্ছে “
২. ” ছেলেরা মাঠে খেলছে “ একটি বাক্য যার উদ্দেশ্য হচ্ছে ” ছেলেরা “ এবং বিধেয় হচ্ছে ” মাঠে খেলছে “
৩. “তোমরা কোথায় যাচ্ছ “ যার উদ্দেশ্য ” তোমরা “ এবং ” কোথায় যাচ্ছ “ হচ্ছে বিধেয়।
আবার কখনো কখনো বাক্যের মধ্যে উদ্দেশ্য ও বিধেয় মিশে থাকে, বাক্যের প্রথম দিকে এবং শেষ দিকেও উদ্দেশ্য থাকে। নিচে আরোও উদাহরণ দেওয়া হল।
১. যেমন “প্রশ্নের উত্তরে ছাত্রটি চুপ করেছিল” এখানে ” ছাত্রটি “ হচ্ছে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় হচ্ছে “প্রশ্নের উত্তরে চুপ করে ছিল “।
২. ” মেয়েটি খুব শান্ত “ এই বাক্যে উদ্দেশ্য প্রথমে আছে অর্থাৎ মেয়েটি।
৩. “সাহসী মানুষ ছিলেন নেতাজি “ এই বাক্য উদ্দেশ্য শেষে আছে অর্থাৎ নেতাজি।
আবার বাক্যের দুটি দিক আছে একটি হলো গঠনগত এবং অপরটি হল অর্থগত
গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী?
গঠনগত দিক থেকে বাক্যকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় – (১) সরল বাক্য (২) জটিল বাক্য এবং (৩) যৌগিক বাক্য
(১) সরল বাক্য কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বাক্য একটি মাত্র উদ্দেশ্য বা কর্তা এবং একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকে তাকে বলে সরল বাক্য।
যেমন –
- (ক) ছেলেরা মাঠে বল খেলছে।
- (খ) রাম রোজ বিদ্যালয় যায়।
(২) জটিল বাক্য কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বাক্য একটি প্রধান অংশ এবং এক বা একাধিক পরাধীন অংশ থাকে তাকে জটিল বাক্য বলে।
জটিল বাক্য স্বাধীন অংশ বা প্রধান অংশ এবং পরাধীন অংশ সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয় দ্বারা যুগত থাকে। এই সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়গুলি হল – যে-সে, যেমন-তেমন, যদি-তবে, যেখানে-সেখানে, যেহেতু-সেহেতু, ইত্যাদি।
উদহারণ দিয়ে বোঝানো যাক –
- (ক) আমি যখন আসি তখন সে চলে যায়।
- (খ) যেমন কর্ম তেমন ফল।
- (গ) যে আগে যাবে সে প্রথম পাবে।
(৩) যৌগিক বাক্য কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বাক্য দুই বা ততোধিক সরলবাক্য সংযোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত থাকে তাকে যৌগিক বাক্য বলে।
যেমন –
- (ক) সে রোগ কিন্তু শক্তিশালী।
- (খ) বিদ্যালয়ে যাব এবং মন দিয়ে পড়া শুনবো।
অর্থ অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ অর্থ অনুসারে বাক্যকে পাঁচভাগে ভাগ করা হয় সেগুলি হল –
- (১) নির্দেশক বাক্য
- (২) প্রশ্নবোধক বাক্য
- (৩) অনুজ্ঞাসূচক বাক্য
- (৪) বিস্ময়সূচক বাক্য এবং
- (৫) ইচ্ছাসূচক বাক্য
(১) নির্দেশক বাক্য কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বাক্য বিষয় সম্পর্কে বিবৃতি বা বর্ণনা দেওয়া হয় তাকে নির্দেশক বাক্য বলে। যেমন –
- রাম ভালো ছেলে।
- বসন্তে কোকিল ডাকে।
- জঙ্গল এখানে ঘন নয়।
নির্দেশক বাক্যের আবার দুটি ভাগ – ইতিবাচক বা হ্যাঁ-সূচক এবং নেতিবাচক বা না-সূচক।
ইতিবাচক বা হ্যাঁ-সূচক বাক্য কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বাক্যের দ্বারা কোনো কিছু স্বীকার করা হয়, তাকে ইতিবাচক বা হ্যাঁ-সূচক বাক্য বলা হয়। যেমন –
- আজ খুব শীত।
- বৃষ্টি নেমেছে মুষলধারে।
নেতিবাচক বা না-সূচক বাক্য কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বাক্যের দ্বারা কোনো কিছু অস্বীকার করা হয়, তাকে নেতিবাচক বা না-সূচক বাক্য বলে। না, নয় ইত্যাদি দ্বারা অস্বীকার করা বোঝায়। যেমন –
- আজ দিনটা ভালো নয়।
- সে এখন দিল্লিতে থাকে না।
(২) প্রশ্নবোধক বাক্য কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বাক্যের দ্বারা কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করা বোঝায়, তাকে প্রশ্নবোধক বাক্য বলে। যেমন –
- সে কি আসবে?
- তুমি এখন খাবে কি?
(৩) অনুজ্ঞাসূচক বাক্য কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বাক্যের দ্বারা আদেশ, নির্দেশ, অনুরোধ, উপদেশ, প্রভৃতি বোঝায়, তাকে অনুজ্ঞাসূচক বাক্য বলে। এই ধরণের বাক্যে উদ্দেশ্য বা কর্তা ‘ তুমি ‘, ‘ তোমরা ‘ প্রায় উহ্য থাকে। যেমন –
- মন দিয়ে পড়াশোনা করো।
- এখন বাড়ি যাও
(৪) বিস্ময়সূচক বাক্য কাকে বলে?
উত্তরঃ বিস্ময়সূচক বাক্য যে বাক্যের দ্বারা বিস্ময় বা আবেগ প্রকাশিত হয়, তাকে বিস্ময়সূচক বা আবেগসূচক বাক্য বলে। যেমন –
- কি মজা!
- এখানে কত সুখ!
(৫) ইচ্ছাসূচক বাক্য কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বাক্যের দ্বারা বক্তার মনের কামনা, বাসনা, প্রার্থনা, ইচ্ছা, ইত্যাদি প্রকাশ পায়, তাকে ইচ্ছাসূচক বাক্য বলে। যেমন –
- তুমি সুখী হও।
- তোমার যাত্রা শুভ হোক।